আমরা সকলেই অবগত আছি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদের মানব জীবনে কত বড় ক্ষতি সাধন করে গেছে। এখন পর্যন্ত সরকারী খাতায় ৬৫,২৮,১০৫ জন মারা গিয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছিল ৬১,২৫,২৬,৯৪৮ জন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও লাখো মানুষ মারা গিয়েছিল। ভারতের বিভিন্ন ছোট ছোট গরীব রাজ্যের লোকজন পেটের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে বড় বড় রাজ্যের শহরে যায় দুমুঠো ভাতের জন্য। চারিদিতে সত্যি-মিথ্যার একটা গুজব রোটে যায়, শহর থেকে যারা গ্রামে মানে নিজের বাড়িতে যাচ্ছে তারা সবাই করোনা বয়ে নিয়ে আসছে। সে দেশের সরকার ডিক্রী জারী করে দেয় প্রতিটি রাজ্যের সীমানা বন্ধ করার জন্য। তবুও লাখো মানুষ গরুর গাড়ী, সাইকেল, ভ্যান, পিকআপ এবং পায়ে হেঁটে তাদের নিজের দেশ নিজের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য আকুল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে অনেক মানুষ ইট-পাথর সিমেন্ট বালি মেশানো মেশিনের গাড়ীর ভিতর মানুষ লুকিয়ে পর্যন্ত তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য পিছুপা হননি। কারণ লকডাউন দিলে তারা খাবে কি। সন্তানদের মুখে কি দেবে। এই নিয়ে তৈরী অনুভব সিন্হা লেখায় এবং পরিচালনায় তৈরী হয়েছে ভীর (Bheed)। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও, ভূমি পেডনেকার, দিয়া মির্জা, আশুতোষ রানা, পঙ্কজ কাপুর, কৃতিকা কামরাসহ আরো অনেকে। এই ছবিটি ১৯৪৭ এর দেশভাগ এবং কোভিড ২০১৯ এর বর্ডার ক্রস এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবিতে রাজকুমার রাও একজন সাধারণ পুলিশ ইন্সপেক্টর থেকে একটি ছোট চোকির ইনচার্জ হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাজকুমার রাও একজন গুণী অভিনেতা। ভূমি পেডনেকর কে দেখা গিয়েছে একজন ডাক্তার হিসেবে। একজন সাধারণ দারোয়ান বা সিকিউরিটি গার্ডের ভূমিকায় পঙ্কজ কাপুরের অভিনয় সত্যিই বাহবা পাওয়ার যোগ্য। উনি একজন বরিষ্ঠ অভিনেতা। সবার মুখে খাবার দেওয়ার জন্য উনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ছবিতে সেটাই দেখানো হয়েছে। ছবিতে বিশেষ একটি চরিত্রে দিয়া মির্জাকে দেখা গিয়েছে। ছবিটিতে একটি অদম্য সাহসী অত্যন্ত গরীব মেয়ে তার নেশারু বাবাকে নিয়ে একটি সামান্য সাইকেল করে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ক্রোশের পর ক্রোশ সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে একটি দিয়া মির্জার মুখে একটি সংলাপ খুবই হৃদয় গেঁথে গেছে। সেটি হলো এই মেয়েটি থামার মেয়ে নয়। তার চলা রাস্তায় দিয়া মির্জাও যেতে চায় তার গন্তব্যে।
এই মুভিটি সম্পূর্ণ সাদাকালোভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ছবিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের লকডাউনের সময় সামাজিক বৈষম্যের ভিজ্যুয়ালগুলি 1947 সালের দেশভাগের সময় লোকেদের সাথে যা হয়েছিল তার সাথে আকর্ষণীয়ভাবে মিল ছিল তা প্রদর্শন করা।
ছবিটি অসাধারণ হয়েছে। সত্যি হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মতন একটি ছবি।